দরজায় অবুঝ সন্তান, ভিতরে কাঁ’দছেন করো’নায় আ’ক্রান্ত চিকিৎসক মা

মা অন্য ঘরে, ছে’লে বায়না ধ’রেছে মায়ের কাছে যাবে। মে’য়ে বায়না ধ’রেছে মায়ের স’ঙ্গে ঘুমাবে। গত কয়েক সপ্তাহ চিকি’ৎসক মাকে খুব কমই কাছে পেয়েছে দুই সন্তান। এখন তাদের মা বাড়িতে। এক ছাদের নিচে থাকলেও ভিন্ন রুমে মা।

মায়ের স’ঙ্গে সন্তানদের দেখা নেই। দুই সন্তান এক রুমে। চিকি’ৎসক বাবা আরেক রুমে। এর আগে এমন নিঃসঙ্গ ব’ন্দি সময় কা’টাতে হয়নি তাদের। গল্পটা আমাদের! এক চিকি’ৎসক দম্পতি ও তার সন্তানদের। তাদের এক শি’শুসন্তানের বয়স চার। মে’য়েসন্তানের বয়স সাত। এই বয়সে মায়ের বুকে ঘুমানোর কথা তাদের।

মায়ের স্নেহমাখা হাত থাকার কথা তাদের মা’থায়। কিন্তু তাদের নিঃসঙ্গ ক’রে দিল করো’না। মায়ের কাছ থেকে দূ’রে সরিয়ে দিল তাদের। একই বাড়িতে থেকেও আব’দ্ধ নির্দিষ্ট একটি রুমে তাদের বসবাস। প্রিয় সন্তান বার বার আম্মু বলে ডাকে। একসময় ডাকে সাড়া দিলেও আরেক সময় সাড়া নেই।

কারণ এতে সন্তানদের কাছে নিতে না পারার ক’ষ্ট বেড়ে যায়। এ অব’স্থায় বুকে পাথর বাঁধলেন চিকি’ৎসক মা। সন্তানদের ভালোবাসা ভু’লে কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন তিনি। যাতে সন্তানদের গায়ে না লাগে করো’নার আঁচড়।এই চিকি’ৎসক দম্পতি ও তার সন্তানদের এমন নিঃসঙ্গ ব’ন্দিদশার কথা তুলে ধ’রে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন,

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের ইন্টার্ন চিকি’ৎসক সুমন হুসাইন। সোমবার (২০ এপ্রিল) রাতে নিজে’র ফেসবুকে এই পোস্ট দেন তিনি। পোস্টে তিনি লি’খেছেন, ‘সব কিছুতেই পাহাড়সম বা’ধা হয়ে দাঁড়িয়েছে করো’না। পরিবার-সমাজসহ দেশ-বিদেশে সবাই ব’ন্দি। বর্তমানে করো’না যোদ্ধারা পরিবার-সমাজ থেকে বি’চ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করছেন।

প্রিয় মা-বাবা, স্ত্রী’-সন্তানের স’ঙ্গে অনেকের দেখা হয় না বহুদিন। কথা হয় ফোনে, দেখা হয় দূ’র থেকে। মনের ভেতরে একটা অ’তৃ’প্তি থেকে যায় প্রিয়জনের জন্য। তারপরও কিছুই ক’রার নেই। কারণ সুযোগ পেলেই প্রিয়জনকে আ’ক্রান্ত করবে করো’না। বর্তমানে সামাজিক দূ’রত্ব বজায় রাখা খুবই জ’রুরি।’

এই চিকি’ৎসক আরও লি’খেছেন, ‘বিষয়টি সাধারণ মানুষ কম বুঝলেও সবচেয়ে ভালো জা’নেন চিকি’ৎসক’রা। ময়মনসিংহের এক নারী চিকি’ৎসক বুকে পাথর বেঁ’ধে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কিন্তু তার শি’শুসন্তান কোনোভাবেই মানতে পারছে না; মা বাড়িতে থাকার পরও কেন তার কাছে আ’সছে না।

কেন দরজা ব’ন্ধ ক’রে রেখেছে মা। শি’শুটি মায়ের ঘরের দরজায় ধা’ক্কা দেয় বার বার। দরজা না খো’লায় লাথি দিয়ে ভে’ঙে ফেলার চেষ্টা ক’রে অবুঝ শি’শুটি। তবুও সাড়া-শব্দ নেই মায়ের।’ চিকি’ৎসক দম্পতির সন্তানের ছবি দিয়ে সুমন হুসাইন আরও লি’খেছেন, ‘মা অন্য ঘরে, ছে’লে বায়না ধ’রেছে মায়ের কাছে যাবে।

মে’য়ে বায়না ধ’রেছে মায়ের স’ঙ্গে ঘুমাবে। গত কয়েক সপ্তাহ চিকি’ৎসক মাকে খুব কমই কাছে পেয়েছে দুই সন্তান। এমনটা হয়নি এর আগে। দরজা ধা’ক্কায় সন্তানরা, মাকে ডাকে। চিকি’ৎসক বাবা তাদের বোঝানোর চেষ্টা ক’রে, ভেতর থেকে মা-ও বোঝায়। অবুঝ সন্তানরা বুঝে না তাদের মা করো’নায় আ’ক্রান্ত।

ভেতরে মা কাঁদেন, যে মা একজন চিকি’ৎসক। রো’গীর সেবা দিতে গিয়ে করো’নায় আ’ক্রান্ত তাদের মা। স্বা’মী-সন্তান দূ’রে রেখে তিনদিন ধ’রে কোয়ারেন্টাইনে এই চিকি’ৎসক।’ তিনি আরও লি’খেছেন, ‘চিত্রটা কল্পনা করুন। বেশ ক’ষ্ট দিচ্ছে না গল্পটা? দারুণ না গল্প টা? এটা গল্প নয়, একটুও গল্প নেই। আমা’র অ’তি পরিচিত চিকি’ৎসক আপুর গল্প। গল্পটা সব চিকি’ৎসক মা-বাবার গল্প।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের গাইনি বিভাগের একটা ইউনিটের এক রো’গীর করো’না পজিটিভ ধ’রা প’ড়েছে। আ’ক্রান্ত ব্য’ক্তির সংস্প’র্শে গেছেন সব চিকি’ৎসক-নার্স। তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। প’রী’ক্ষার পর জা’না যাবে কতজন আ’ক্রান্ত।’ সুমন হুসাইন আরও লি’খেছেন, ‘গাইনি বিভাগের প্রা’য় সব চিকি’ৎসকের দুই’একটা বাচ্চা আছে।

ডিউটির সময় যখন কথা হয়; সবাইকেই একটা কথা বলতে শুনি, আমি মা’রা যাই কোনো স’মস্যা নেই। কিন্তু আমা’র বাচ্চাটার কী’ হবে, আমা’র বাচ্চাদের কী’ হবে?। যেদিন গাইনি বিভাগে করো’না রো’গী শনা’ক্ত হয়েছে সেদিন কয়েকজন গাইনি চিকি’ৎসক বাসায় যাননি। তাদের একটাই চিন্তা; আমি ম’রে যাই, স’মস্যা নেই। কিন্তু আমা’র বাচ্চাগুলোকে যদি আমা’র জন্য আ’ক্রান্ত হতে হয় তাহলে ম’রে গিয়েও নিজেকে ক্ষ’মা ক’রতে পারব না। আম’রা কেউ বাসায় যাব না।’