গাড়িচালক হারুনকে হ’ ত্যা করে দুই বছর আগের ধ’ র্ষ ’ণের প্রতিশোধ নেন লিপি

কিলিং মিশন শুরু ক’রে লিপি আক্তার নিজেই। প্রেমের অভিনয় ক’রে নির্জন বাসায় ডেকে নেয় হারুনকে। এরপর লিপি নিজ হাতে তৈরি চা পান ক’রতে দেয় হারুনকে। তারপর ঘ’নিষ্ঠ হয়ে উঠে দু’জন।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারুনের ঘাড়ে স্ট্যাম্প দিয়ে আঘা’ত ক’রে লিপি। হারুন মাটিতে লুটিয়ে প’ড়ে। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে লিপির মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তারপর এই কিলিং মিশনে অংশ নেয় রাজন হাওলাদার ও মাহবুব। মৃ’ত্যু নি’শ্চিত ক’রে দোকান থেকে ট্রলিব্যাগে ভরে লা’শটি ফেলে দেয় খালে।

গত ২৫শে নভেম্বর রাজধানীর ডেম’রার বামৈল বাঁশেরপুল এলাকার ডিএন্ডডি খাল থেকে লা’শটি উ’দ্ধার ক’রে পু’লিশ। তখনো তার কোনো পরিচয় জা’না যায়নি। পরবর্তীতে পরিচয় উদ্‌ঘাটন হলেও কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে চা’ঞ্চল্য’ক’র এই হ’ত্যাকা’ণ্ডের ক্লু উদ্‌ঘাটন ক’রেছে পু’লিশ। গ্রে’প্তা’র ক’রা হয়েছে হ’ত্যাকা’ণ্ডে জড়ি’তদের।

গ্রে’প্তা’রের পর পু’লিশের কাছে পুরো কিলিং মিশনের বর্ণনা দিয়েছে লিপি ও তার সহযোগীরা। তদ’ন্ত সংশ্লি’ষ্ট সূত্রে জা’না গেছে, ২৪শে নভেম্বর সকালে হ’ঠাৎ ক’রেই লিপির কল। একান্তে সময় কাটাতে হারুনকে বাসায় যেতে বলে লিপি। হারুন তখনই আসতে চায়। কিন্তু লিপি সময় বেঁ’ধে দেয়, সকাল ৮টার পর।

তখন কেউ বাসায় থাকবে না। সাজগোজ ক’রে লিপি। কিছুক্ষণের মধ্যে উপস্থিত হয় হারুন। হারুনকে বাসায় ঢুকিয়ে দরজা ব’ন্ধ ক’রে দেয়। সোফায় পাশাপাশি বসে দু’জন। গল্প-কথায় কাটে কিছুক্ষণ। এরমধ্যেই চা তৈরি ক’রে আনে লিপি। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই লিপিকে কাছে টানে হারুন। চা শেষ ক’রতে বলে লিপি।

চা পান শেষে কাছে এলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ ক’রে লিপি। একসময় ঘুম ঘুম ভাব আসে হারুনের। শ’রীর যেনো নিস্তেজ প্রা’য় । এরমধ্যেই প্রণয়ের আড়ালে থাকা আ’সল রূপ প্রকাশ ক’রে লিপি। আগে থেকে প্র’স্তুত রাখা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে হারুনের ঘাড়ে আঘা’ত ক’রে। মাগো বলে চিৎকার ক’রে সোফায় ঢলে প’ড়ে।

তারপর লিপি ফোনে ডেকে আনে তার আত্মীয় লেগুনা চালক মাহবুবকে। একইভাবে ডেকে আনা হয় লিপির স্বা’মী নি’র্মাণমিস্ত্রি রাজন হাওলাদার ওরফে আল-আমিনকে। হারুন বাঁ’চার জন্য অনুনয় ক’রে। লিপি শর্ত দেয়, স্বজনদের কাছ থেকে দু’লাখ টাকা এনে দিলে তাকে ছে’ড়ে দেয়া হবে। নতুবা তাকে হ’ত্যা ক’রা হবে।

জীবন বাঁ’চানোর জন্য রাজি হয় হারুন। নিজে’র ভীষণ বি’পদ জা’নিয়ে টাকার জন্য তাগাদা দেয় স্বজনদের কাছে। হারুনের বি’পদের কথা জে’নে দু’দ’ফায় বিকাশে ৪৫ হাজার টাকা পাঠায় তার স্বজনরা। সেই টাকা ওই সময়েই লিপি ক্যাশ আউট ক’রে পাশের বিকাশ এজেন্ট থেকে। এরমধ্যেই দোকান থেকে কিনে এনে দুপুরে তেহারি খায় তারা।

লিপি, মাহবুব ও রাজন মিলে সিদ্ধা’ন্ত নেয় হারুনকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। বেঁ’চে থাকলে ক’ঠিন প্র’তিশোধ নেবে। হ’ত্যার সিদ্ধা’ন্ত চূড়া’ন্ত। সিদ্ধা’ন্ত অনুসারেই সন্ধ্যায় হারুনকে জাপটে ধ’রে তিনজন। হারুন তখন কান্না করছিলো। বাঁ’চার জন্য অনুনয় করছিলো। এসব অনুনয় তোয়াক্কা না ক’রেই তাকে মু’হূর্তের মধ্যেই বি’ছানায় ফেলে তোয়ালে দিয়ে গলা চে’পে ধ’রে রাজন।

পা চে’পে ধ’রে লিপি। হারুনের বুকে বসে মুখে বালিশ চে’পে ধ’রে মাহবুব। তার মৃ’ত্যু নি’শ্চিত ক’রে চিটাগাং রোডের একটি দোকান থেকে ট্রলিব্যাগ কিনে আনে তারা। লা’শটি বেঁ’ধে ওই ব্যাগে ঢোকায়। তারপর সিএনজি অটোরিকশায় ক’রে নিয়ে যায় বামৈল বাঁশেরপুল এলাকায়। সেখানে গোলাম মোস্তফা স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংল’গ্ন খালে ফেলে দেয় লা’শ ভরা ট্রলিব্যাগটি।

লিপির ভাষ্য অনুসারে হারুনকে বাসায় ডেকে আনার আগে মাহবুবের স’ঙ্গে প’রামর্শ ক’রেছিলো লিপি। প’রামর্শ অনুসারে ডেম’রা এলাকার সেবা নামক একটি ফার্মেসি থেকে ঘুমের দু’টি ও’ষু’ধ সংগ্রহ ক’রে দেয় মাহবুব। হ’ত্যার কারণ হিসেবে তদ’ন্ত সংশ্লি’ষ্টদের কাছে লিপি জা’নিয়েছে, প্রা’য় দু’বছর আগে নির্জন বাসায় ডেকে নিয়ে লিপিকে ধ’র্ষ’ণ ক’রে গাড়িচালক হারুনুর রশিদ হাওলাদার।

বিষয়টি সামাজিক কারণে গো’পন রাখে লিপি। এরপর থেকেই প্রা’য় ই লিপিকে বির’ক্ত করতো হারুন। সব সময় তাকে জিম্মি ক’রে ভোগ ক’রতে চাইতো। এসব কারণেই ক্ষু’ব্ধ হয়ে হারুনকে হ’ত্যার প’রিকল্পনা ক’রে লিপি। গত ২৫শে নভেম্বর হারুনের লা’শসহ ট্রলিব্যাগটি উ’দ্ধার ক’রে পু’লিশ। তারপরই তদ’ন্তে নামে পু’লিশ ও গোয়েন্দারা।

অবশেষে গতকাল শরীয়তপুর থেকে লিপি ও রাজনকে এবং ঢাকা থেকে মাহবুবকে গ্রে’প্তা’র ক’রে পু’লিশ। সিনিয়র স’হকা’রী পু’লিশ কমি’শনার রাকিবুল হাসানের তত্ত্বাবধানে, ডেম’রা থা’নার পরিদর্শক (তদ’ন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে আ’সা’মিদের গ্রে’প্তা’র ক’রা হয়।

ডেম’রা থা’নার পরিদর্শক (তদ’ন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি ক্লু-লেস ছিল। গোয়েন্দা তৎপরতা ও তথ্য প্রযু’ক্তির মাধ্যমে জড়ি’তদের শনা’ক্ত ক’রা হয়। পরে তাদের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রে’প্তা’র ক’রা হয়েছে। চা’ঞ্চল্য’ক’র এই হ’ত্যাকা’ণ্ডে জড়ি’ত থাকার বিষয়টি তারা স্বী’কার ক’রেছে। আজ তাদের আ’দা’লতে হাজির ক’রা হবে বলে জা’নান তিনি।

নি’হত হারুনুর রশিদ হাওলাদার (৩৫)’র বাড়ি ঝালকাঠি জে’লার নলছিটি থা’নার মাদারগোনা গ্রামে। গ্রে’প্তা’র লিপি আক্তার (২২)-এর বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যার নয়াকান্দি গ্রামে, তার স্বা’মী রাজন হাওলাদার ও মাহবুবের বাড়ি ঝালকাঠি জে’লার রাজাপুরের আইলাকান্দি গ্রামে। তারা ডেম’রা বাঁশেরপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো। সূত্র: মানবজমিন।