বিয়ের ৩৪ দিনের মা’থায় মা’রা যায় টাঙ্গাইলের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী নুর নাহারের (১৪) মৃ’ত্যুর ঘ’টনায় স্বা’মী রাজিব খান ও শাশুড়ি বিলকিস বেগমের বি’রুদ্ধে মা’ম’লা দা’য়ের ক’রা হয়েছে। গত রোববার নি’হত নুর নাহারের বাবা নুরু মিয়া বা’দী হয়ে বাসাইল থা’নায় মা’ম’লা দা’য়ের ক’রেন।
২৪ অক্টোবর নুর নাহার মা’রা গেলেও মা’ম’লাটি ১ নভেম্বর রেকর্ড ক’রা হয়। এদিকে মৃ’ত্যুর আগের স্বা’মীর লা’ল’সার কথা তার নানাকে জা’নিয়ে গিয়েছে নুর নাহার। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হা’সপাতা’লে চিকিৎ’সাধীন অব’স্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে নুর নাহারের মৃ’ত্যু হয়।
পরদিন রবিবার (২৫ অক্টোবর) ম’য়নাত’দন্ত শে’ষে তাকে তার নানার বাড়ির ক’বরস্থানে দা’ফন ক’রা হয়। শি’শু গৃহব’ধূর স’ঙ্গে তার স্বা’মীর শা’রীরিক সম্প’র্কের কারণেই র’ক্তক্ষরণ হয়ে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজে’লার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে ঘ’টনাটি ঘ’টে।
এদিকে নি’হত নুর নাহারের স্বা’মীর বাড়ির পক্ষ থেকে গ্রাম্য সা’লিশে বি’ষয়টি মী’মাংসার প্র’স্তা’ব দেওয়া হয়েছে। আ’ইনি প্র’ক্রি’য়ায় এর বি’চার না হলে বাল্যবিয়ের বলি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহারের পরিবার ন্যায়বি’চার পাবে না বলে দা’বি এলাকার সচে’তন মহলের।
নি’হতের পরিবার সূত্রে জা’না যায়, নুর নাহারের বাবা রিকশাচালক ও মা গার্মেন্টসক’র্মী । অ’ভাবের সংসারে তাদের মধ্যে ঝ’গড়া লে’গেই থাকতো। এ কারণে দিনমজুর নানা উপজে’লার কাউলজানী ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল খান পাশের উপজে’লার নলুয়া কলাবাগান গ্রাম থেকে চার বছর ব’য়সে নুর নাহারকে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এরপর তাকে স্কুলে ভর্তি ক’রান। এ বছর নুর নাহার কলিয়া স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছিল। নানাও দরি’দ্র হওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর নুর নাহারকে উপজে’লার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে প্রবাসী রাজিব খানের স’ঙ্গে বিয়ে দেন।
বিয়ের সময় লাল খানের প্রা’য় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই টাকার জোগান দেন তার আত্মীয়-স্বজনরা। বিয়ের পর নুর নাহার অ’প্রা’প্ত ব’য়সে বিয়ে হওয়ায় স’হবাসের পর অভ্যন্তরীণ র’ক্তক্ষরণ শুরু হয় নুর নাহারের। তারপরও স্বা’মীর পাশবিকতা বিন্দুমাত্র কমেনি।
নুর নাহার মৃ’ত্যুর আগমূহুর্তে তার নানাকে জ’ড়িয়ে ধ’রে বলেছিল, নানা ও (স্বা’মী) মানুষ না জানোয়ার, আমি (ছাত্রী) কত হাতে পায়ে ধ’রেছি, সহ্য ক’রতে পারছিনা তাও ও (স্বা’মী) আমা’রে ছাড়ে নাই।
র’ক্ত পড়তাছে, য’ন্ত্রণায় কুকাইতাছি, দম ব’ন্ধ হয়ে আ’সছে, আমা’রে বাঁ’চতে দেন, তাও ও (স্বা’মী) আমা’রে ছাড়ে নাই। ও (স্বা’মী রাজিব) বলে প্রথম দিকে স’হবাসে এরকম স’মস্যা হয়ই, কয়েকদিন পর ঠিক সয়ে যাবে, এমনটাই বলতে বলতে মৃ’ত্যুর কোলে ঢলে প’ড়ে বলে জা’নান নানা লাল খান।
বিলাপের স্বরে কথাগুলো বলতে বলতে অ’জ্ঞান হয়ে প’ড়েন ছাত্রীটির নানা। নুর নাহারের নানা লাল খান আরও বলেন, আমা’র মে’য়ের জামাইর অ’ভাবের কারণে নুর নাহারকে ছোটবেলাতেই আমা’র বাড়িতে নিয়ে আসি। দিনমজুরি ক’রেই তাকে লেখাপড়া ক’রাচ্ছিলাম।
ছেলে প্রবাসী ও ধ’নী হওয়ায় আম’রা নুর নাহারকে বিয়ে দেই। বিয়ের কয়েকদিন পর থেকে তার র’ক্তক্ষরণ শুরু হয়। এ জন্য নুর নাহারের শাশুড়ি তাকে গ্রাম্য কবিরাজে’র ও’ষুধ খাওয়াচ্ছিল। পরে র’ক্তক্ষরণ বেশি হলে হা’সপাতা’লে ভর্তি ক’রা হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, অ’প্রা’প্ত ব’য়সে বিয়ের কারণে নুর নাহারের গো’পনা’ঙ্গ দিয়ে র’ক্তক্ষরণ হচ্ছিল। শে’ষ পর্যন্ত আম’রা তাকে আর বাঁ’চাতে পারলাম না।
নুর নাহারের স্বা’মী রাজিব বলেন, আমা’র বিয়ের পর তার সাথে পাঁচ ছয়দিন মে’লামেশা হয়েছে। সে (ছাত্রী) বলছে তার ক’ষ্ট হয়, ব্য’থার কথা জা’নান এবং র’ক্তক্ষরণ দেখা দেয়। বি’ষয়টি দু’পক্ষের গার্জেনদের জা’নানো হয়। গার্জিয়ানরা চিকিৎ’সার ব্যব’স্থা ক’রেন।
প্রতিবেদক আরও প্রশ্ন ক’রতে চাইলে দ্রু’ত ঘরের ভে’তর চলে যান রাজীব। নুর নাহারের শাশুড়ি বিলকিস বেগম বলেন, আমি মনে করছি ভুতপেতের আছর ক’রতে পারে, তাই কবিরাজ দিয়ে তাবিজ এনে পরিয়েছি। তাতেও কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে টাঙ্গাইলে ক্লিনিকে নিছি।
নুর নাহারের বাবা বলেন, রাজিবের বাবাকে কয়েকদ’ফা ফোন দিয়েছি। তিনি বলছেন, আপনারা চিকিৎ’সা ক’রান, আমি গিয়ে কি করবো। আর ক্লিনিকে নুর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বা’মী রাজিব কৌ’শলে সেখান থেকে কে’টে প’ড়ে।
র’ক্তক্ষরণ ব’ন্ধ না হওয়ায় বি’ষয়টি নিয়ে নুর নাহার ও রাজিবের পরিবারে আলোচনা হয়। পরে রাজিবের পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য করিবাজ দিয়ে চিকিৎ’সা ক’রানো হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর নুর নাহারকে ভর্তি ক’রা হয় টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে।
ওই ক্লিনিকে নুর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বা’মী রাজিব ও তার পরিবার কৌ’শলে সেখান থেকে কে’টে প’ড়ে। পরে অবস্থার অ’বনতি হলে নুর নাহারের পরিবার তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হা’সপাতা’লে ভর্তি ক’রে। তাকে চিকিৎ’সা ক’রানোর মতো টাকাও তখন ছিল না গরিব পরিবারটির হাতে।
স্থা’নীয় গ্রামবাসী প্রা’য় ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলে উন্নত চিকিৎ’সার জন্য নুর নাহারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হা’সপাতা’লে নিয়ে আসে তার পরিবার। সেখানে চিকি’ৎসাধীন অব’স্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে তার মৃ’ত্যু হয়।
নুর নাহারের নানা জা’নান, মৃ’ত্যুর পর নুর নাহারের স্বা’মী রাজিব তার লা’শ পর্যন্ত দে’খতে আসেনি। মূ’লত স্বা’মীর কারণেই আমা’র নাতনির মৃ’ত্যু হয়েছে। পা’ষণ্ড স্বা’মী রাজিব খান নুর নাহারের মামা লুৎফর খান বলেন, বি’ষয়টি থা’না পু’লিশকে জা’নানো হয়েছে। এ ঘ’টনায় মা’ম’লার প্র’স্তুতি চলছে।
কলিয়া স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স’হকা’রী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আম’রা নিয়মিতই শিক্ষার্থীদের খোঁ’জ-খবর নিয়ে থাকি। কিন্তু হ’ঠাৎ ক’রেই গো’পনে নুর নাহারকে তার পরিবার বিয়ে দিয়ে দেয়। নুর নাহার মেধাবী ছাত্রী ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে তার রোল নম্বর ছিল ২। বি’ষয়টি অ’ত্যান্ত দুঃ’খজনক। আম’রা একজন মেধাবী ছাত্রীকে হা’রালাম।
উপজে’লা নির্বাহী ক’র্মক’র্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বাল্যবিয়ের শি’কার হয়ে অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্রীর মৃ’ত্যু হয়েছে। বি’ষয়টি অ’ত্যন্ত দুঃ’খজনক। শুধু আ’ইন দিয়ে নয়, সামাজিকভাবে বাল্যবিয়ে নির্মূ’ল ক’রতে হবে।