রাজধানীর ফার্মগেটে আবাসিক হোটেল থেকে দুই শিক্ষার্থীর লা’শ উ’দ্ধারের পর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পু’লিশ কোনো ক্লু উদ্ঘাটন ক’রতে পারেনি। অথচ লা’শ উ’দ্ধারের পরপরই পু’লিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল,
যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে তাদের মৃ’ত্যু হয়েছে। পরিবারের দা’বি, পরিকল্পিতভাবে তাদের হ’ত্যা করে তা ধা.মাচা’পা দিতেই যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের কথা বলা হয়েছে।পু’লিশ বলছে, যৌ’ন উ’ত্তেজক ও’ষুধ সেবনে তারা মা’রা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকি’ৎসক বলছেন, পুরু’ষের সেবন করা যৌ’ন উ’ত্তেজক ও’ষুধে না’রীর মৃ’ত্যুর কোনো নজির নেই।
গত ২ এপ্রিল ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল সম্রাটের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে উ’দ্ধার করা হয় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরী (২০) ও তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে’র ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজলের (২২) ম’রদে’হ। সজলের বাড়ি কুমিল্লার না’ঙ্গলকোট থা’নার হরিপুর গ্রামে। আর মরিয়মের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জে’লায়।
লা’শ উ’দ্ধারের সময় পু’লিশ ও হোটেল ক’র্তৃপক্ষ দা’বি করে, যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করে দুই জন মা’রা গেছেন। সজলের পকে’টে ডুমেক্স-৬০ নামে দুটি যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়া গেছে। তা দেখেই এই সি’দ্ধান্তে পৌঁছে পু’লিশ। পু’লিশের করা সু’রতহাল প্র’তিবেদন অনুযায়ী, দুজনের শ’রীরে কোনো আ’ঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
আত্মহ’ত্যাও করেননি তারা। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মরিয়ম চৌধুরী (২০) ও তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে’র ছাত্র আমিনুল ইসলাম সজলের (২২) ২ এপ্রিল র’হস্যজনক মৃ’ত্যু হয়। এ ঘ’টনার পর থেকে পু’লিশ ও হোটেল ক’র্তৃপক্ষ র’হস্যজনক আচরণ করছে। হোটেলের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ মরিয়ম ও সজলের পরিবারকে দেখানো হয়নি।
হোটেলের এক ক’র্মকর্তা বলেছেন, সব ফুটেজ পু’লিশ নিয়ে গেছে। অন্যজন আরেক ক’র্মকর্তা বলেছেন, সব সিসি ক্যামেরা ন’ষ্ট ছিল। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ ঘ’টনায় তারা হ’ত্যা মা’মলা ক’রতে চাইলেও পু’লিশ অপমৃ’ত্যুর মা’মলা নিয়েছে। এমনকি ম’য়নাত’দন্ত ছাড়াই লা’শ দিতে চেয়েছিল পু’লিশ। এ নিয়ে তারা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পাচ্ছেন না।
পু’লিশের দা’বি, ঘ’টনাস্থল থেকে ডুমেক্স নামের একটি যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেটের পাতা পাওয়া গেছে। ওই পাতায় দুটি ট্যাবলেট ছিল না। পু’লিশ বলছে, ওই ট্যাবলেট সেবনের কারণেই মরিয়ম ও সজলের মৃ’ত্যু হয়েছে। তাদের শ’রীরে আ’ঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের দা’বি, মরিয়ম তৃতীয় কারও লালসার শি’কার হয়েছেন।
এ ঘ’টনার সাক্ষী না রাখতেই হয়তো সজলকেও খু’ন করা হয়েছে। পু’লিশ ও হোটেল ক’র্তৃপক্ষ সেই ঘ’টনা ধা.মাচা’পা দিতে যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের নাটক সাজিয়েছে। এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকি’ৎসকরা বলেছেন, দুটি ডুমেক্স ট্যাবলেট সেবন করলে কারও মৃ’ত্যু হয় না। পুরু’ষের যৌ’ন উ’ত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের কারণে না’রীর মৃ’ত্যু হওয়ার ঘ’টনাও নজিরবিহীন। এটা নি’শ্চিতভাবেই বলা যায়, তাদের মৃ’ত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে।
বঙ্গব’ন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর এবং যৌ’ন ও চর্মরো’গ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, দুটি ডুমেক্স সেবন করলে সাধারণত কারও মৃ’ত্যু হওয়ার কথা নয়। যদি অন্য কোনো রো’গ না থাকে। দুটি কেন, তিনটি সেবন করলেও কারও মৃ’ত্যু হওয়ার কথা নয়। আর এটি সেবন করলে না’রীর মৃ’ত্যু হবে না। অন্য কোনো কারণে তাদের মৃ’ত্যু হয়েছে। পু’লিশ এটা বললে তা অতি উৎসাহী হয়ে বলেছে।
২ এপ্রিল ফার্মগেটের আবাসিক হোটেল ‘সম্রাট’-এর ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে দুই শিক্ষার্থীর লা’শ উ’দ্ধারের পর পু’লিশ যে বক্তব্য দিয়েছিল এখন সেখান থেকে সরে এসেছে। ওই সময় তেজগাঁও থা’নার এএসআই আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, সজলকে খাটে শোয়া অব’স্থায় পাওয়া গেছে। আর মরিয়ম মেঝেতে প’ড়েছিল। হয়তো যৌ’ন উ’ত্তেজক কোনো ট্যাবলেট খেয়ে তারা মা’রা গেছেন।
এ বি’ষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থা’নার ওসি মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এএসআই আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা তার নিজস্ব বক্তব্য। ম’য়নাত’দন্ত প্র’তিবেদন ও ভিসেরা প্র’তিবেদন না পেলে পু’লিশ কোনোভাবেই এটা বলতে পারে না। মা’মলার ত’দন্তের অগ্রগতির বি’ষয়ে জানতে চাইলে ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, দুই শিক্ষার্থীর মৃ’ত্যুর বি’ষয়টি এখনও র’হস্যজনক। তাদের শ’রীরে কোনো আ’ঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিভাবে তাদের মৃ’ত্যু হয়েছে ম’য়নাত’দন্ত প্র’তিবেদন পেলে বলা যাবে। তবে অন্যসব বি’ষয়কে সামনে রেখে ত’দন্ত করা হচ্ছে।
মরিয়ম চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে’র সিরাজদিখানের কোলা গ্রামে। তার বাবা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় মে’য়েকে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমা’র মে’য়েটাকে পরিকল্পিতভাবে হ’ত্যা করা হয়েছে। পু’লিশ লা’শের ম’য়নাত’দন্তও ক’রতে চায়নি। থা’নায় তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিল। ঢাকা থেকে মে’য়ের লা’শ আর কলঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফি’রেছি।
মোস্তাক আহমেদ আরও বলেন, হয়তো তৃতীয় কারও লালসার শি’কার হয়েছে তার মে’য়ে। কোনো সাক্ষী যেন না থাকে সেজন্য সজলকেও হ’ত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামে থাকতে মরিয়মের স’ঙ্গে একটি ছেলের সম্প’র্ক ছিল। পরে ওই ছেলে মরিয়মকে হ’ত্যার হু’মকিও দিয়েছিল। জমিজমা সংক্রা’ন্ত স’মস্যা রয়েছে আমাদের। এসব বি’ষয় পু’লিশ ত’দন্ত করে দে’খতে পারে। জিগাতলার মুন্সীবাড়ী রোডের একটি না’রী হোস্টেলে মরিয়ম ভাড়া থাকতেন।
ওই না’রী হোস্টেলের পরিচালক আমেনা বেগম জা’নান, ১ এপ্রিল রাতে মরিয়ম তার খালার বাসায় যাওয়ার কথা বলে হোস্টেল থেকে বের হন। তখন সে জা’নিয়েছিল, রাতে বাসায় ফিরবে না। এদিকে সজলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার না’ঙ্গলকোটের হরিপুর গ্রামে। তার বাবা মোশারফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হ’ত্যা করা হয়েছে। অথচ পু’লিশ অ’পবাদ দিয়ে ঘ’টনাটি ধা.মাচা’পা দেয়ার চেষ্টা করছে। জিগাতলার হাজী আবদুল হাই রোডের একটি মেসে সজল ভাড়া থাকতেন। সজলের সহপাঠী ও রুমমেট কামরুল হাসান জা’নান, ১ এপ্রিল রাতে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে সে বের হয়। পরের দিন তারা মৃ’ত্যুর সংবাদ পান।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে লুকোচু’রি করছে সম্রাট হোটেল ক’র্তৃপক্ষ ও পু’লিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে’র বি’ষয়ে জানতে চাইলে হোটেলের ব্যব’স্থাপক রাসেল আহমেদ সুমন বলেন, সব ফুটেজ পু’লিশ নিয়ে গেছে। অপরদিকে হোটেলের তত্ত্বাবধায়ক আহাম্ম’দ হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরাগুলো ন’ষ্ট ছিল। তবে পু’লিশের দা’বি, ৯ তলা ভবনের টাইলসের দোকানে শুধু সিসি ক্যামেরা সচল ছিল। ওই ক্যামেরায় সজল ও মরিয়মের প্রবেশের দৃ’শ্য দেখা গেছে।
সম্রাট হোটেলের ৮০৮ নম্বর কক্ষ থেকে সজল ও মরিয়মের লা’শ উ’দ্ধার করা হয়েছে। ওই কক্ষের টয়লেটের ও’পরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে খুব সহজে ৮০৮ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করা যায়। ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে খু’নিরা বেরিয়ে গেছে কিনা এ নিয়ে স্বজনরা প্রশ্ন তুলেছেন।
মরিয়মের বাবা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, সজল ও মরিয়ম স্বা’মী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে হোটেলে উঠল কিভাবে? তাদের কাছে তো বিবাহের কোনো কাগজপত্র ছিল না।
এ বি’ষয়ে হোটেলের তত্ত্বাবধায়ক আহাম্ম’দ হোসেন বলেন, তারা সব ডকুমেন্ট দেখিয়ে হোটেল ভাড়া নিয়েছিল। এগুলো পু’লিশকে দেয়া হয়েছে।